মো. কামরুল হোসেন সুমন, ভোলা-মনপুরা প্রতিনিধি:
ভোলার বিচ্ছিন্ন উপজেলা মনপুরায় ক্ষমতার দাপটে গড়ে ওঠা ‘মনপুরা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে’ টেস্ট বাণিজ্যের আড়ালে চলছে ভয়াবহ প্রতারণা। প্রশাসনের নাকের ডগায় বছরের পর বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি সাধারণ ও অসহায় রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে এলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
মনপুরা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্যাথলজি, রেডিওলজি ও আলট্রাসনোগ্রাফি বিভাগ চালু থাকলেও কোনো বিভাগেই নেই বিধি মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক বা টেকনোলজিস্ট। ডায়াগনস্টিক নীতিমালা অনুযায়ী, প্রতিটি রিপোর্টের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা বিএসসি টেকনোলজিস্টের অনুমোদন বাধ্যতামূলক। কিন্তু মনপুরা ডায়াগনস্টিকে শুধুমাত্র কারিগরি বোর্ড থেকে পাস করা একজন টেকনোলজিস্ট দিয়ে প্যাথলজি বিভাগ চালানো হচ্ছে, যাদের সেবা দেওয়ার ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
একইভাবে, রেডিওলজি বিভাগে কোনো রেডিওলজিস্ট ছাড়াই এক্স-রে ও ইসিজির মতো স্পর্শকাতর পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করা হচ্ছে। এই ভুয়া রিপোর্টের জন্য রোগীদের কাছ থেকে সরকারি হারের চেয়ে প্রায় চারগুণ বেশি টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ২০১৪ সালে ‘সি’ ক্যাটাগিতে অনুমোদন পেলেও এর কোনো শর্তই মানা হচ্ছে না। কর্তৃপক্ষ নতুন বছরের হালনাগাদ লাইসেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, বর্জ্য নিষ্কাশন চুক্তিপত্র, ফায়ার সার্ভিসের অগ্নি নির্বাপক সনদ এবং হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, ডায়াগনস্টিক সেন্টারটির মালিক ও যুবলীগ নেতা ফারেজ সামী বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। এদিকে, নীতিমালা অনুযায়ী সরকারি হাসপাতালের এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো বেসরকারি ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার অনুমোদন দেওয়ার নিয়ম না থাকলেও, মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকের পাশেই এই প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নাকের ডগায় কীভাবে এই প্রতারণার ফাঁদ চলছে, তা নিয়ে জনমনে ব্যাপক প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে ভোলার সিভিল সার্জনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “এসব অনিয়ম ও সিন্ডিকেট ভাঙতে খুব শিগগিরই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।” তবে কবে নাগাদ এই ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেদিকেই তাকিয়ে আছে মনপুরার সাধারণ মানুষ।