মো. মোস্তাকিম, ময়মনসিংহ (প্রতিনিধি):
ময়মনসিংহের ত্রিশালের একসময়ের প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক অঙ্গন বর্তমানে অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছে। শিল্পচর্চার সেই উন্মাদনা আর উৎসবমুখর পরিবেশ এখন অনেকটাই অনুপস্থিত।
দিবস-ভিত্তিক সরকারি কিছু গতানুগতিক আয়োজন ছাড়া নতুনত্ব বা ব্যতিক্রমী কোনো সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চোখে পড়ে না।
শিল্পী, সাহিত্যিক, নাট্যকার ও নির্দেশকদের মতে, রাজনৈতিক অস্থিরতা, পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, তরুণ প্রজন্মের অনাগ্রহ, গণমাধ্যমের একমুখী প্রচার এবং শিল্পী সমাজের অভ্যন্তরীণ কোন্দল—এসবই ত্রিশালের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতার প্রধান কারণ।
একসময় অনেক সাংস্কৃতিক সংগঠন থাকলেও বর্তমানে হাতে গোনা দু-একটি ছাড়া বাকিগুলো প্রায় নিষ্ক্রিয় অথবা বিলুপ্তির পথে।
দুঃখজনক হলেও সত্যি, কয়েক বছর আগে প্রতিষ্ঠিত “দুখু মিয়া থিয়েটার”-এর মতো সম্ভাবনাময় সংগঠনও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ধুঁকছে।
বয়সের ভারে অনেক প্রবীণ শিল্পী কাজ করতে পারছেন না, আর নতুন প্রজন্ম মঞ্চের প্রতি তেমন আগ্রহী হচ্ছে না। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পৃষ্ঠপোষকতার অভাব সুস্পষ্ট।
তবে, এটি বলা ঠিক হবে না যে ত্রিশালে প্রতিভার অভাব রয়েছে। বরং, এখানে অনেক সম্ভাবনাময় শিল্পী ও অভিনেতা আছেন, যাঁরা শুধু সঠিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে নিজেদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পাচ্ছেন না।
তরুণদের মধ্যে রাজনীতির প্রতি আগ্রহ যতটা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রতি ততটা নেই বললেই চলে। সামাজিক দায়বদ্ধতা কমে যাওয়া এবং টেলিভিশন ও ইন্টারনেট-নির্ভরতাও এর অন্যতম কারণ।
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য কলধ্বনি সংঘ, শুকতারা সংঘ, দুখু মিয়া থিয়েটার-সহ উপজেলার বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন, সরকারি ও বেসরকারি উভয় পর্যায় থেকে পর্যাপ্ত পৃষ্ঠপোষকতা এবং সহযোগিতা পেলে ত্রিশালের ঝিমিয়ে পড়া সাংস্কৃতিক অঙ্গন আবারও তার হারানো প্রাণ ফিরে পাবে।এতে স্থানীয় শিল্পীরা যেমন তাঁদের মেধা বিকাশের সুযোগ পাবেন, তেমনি তরুণ প্রজন্মও সুস্থ সংস্কৃতি চর্চায় আগ্রহী হবে।সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ত্রিশালের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে পুনরায় উজ্জ্বল করা সম্ভব।