মারুফ হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক:
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার জামালপুর ইউনিয়ন এর বিনিরাইল গ্রামে প্রায় আড়াইশো বছরের ঐতিহ্যবাহী জামাই মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ মেলার প্রধান আকর্ষণই হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নিয়ে আসা মাছ কিনতে জামাইদের প্রতিযোগিতা।
এ মেলাকে মাছের মেলাও বলা হয়ে থাকে। অনেকের মতে এ মেলা নিয়ে রয়েছে নানা রূপকথা। অনেকেই বলে জামাইদেরকে উদ্দেশ্য করে এ মেলা বসতো। এলাকার নতুন জামাইরা মেলা থেকে বড় বড় মাছ নিয়ে তার শ্বশুরবাড়িতে যেত। সে মাছ প্রতিযোগিতা। যে জামাই যত বড় মাছ নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে যেত তার ওপর নির্ভর করতে প্রতিযোগিতায় কে বিজয়। তবে এসব কথা গল্পতেই এর বাস্তব ইতিহাস অনেকেরই অজানা। তবে এটা মাছের মেলা হিসেবেও পরিচিত।
প্রতিবছর জানুয়ারি মাসের ১৪ তারিখ এ মেলা বসে। এ দিনটির জন্য উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ সারা বছর অপেক্ষায় থাকে। কারণ জামাই মেলার মূল আকর্ষণই হলো জামাইদের বড় মাছ কেনার প্রতিযোগিতা। বিনিরাইল ও এর আশপাশের গ্রামে যারা বিয়ে করেছেন সে সব জামাই এই মেলার মূল ক্রেতা। জামাইরা চান সবচেয়ে বড় মাছটি কিনে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যেতে। আবার মেয়ে-জামাইকে আপ্যায়ন করতে শ্বশুরেরাও মেলা থেকে বড় বড় মাছ নিয়ে যান বাড়িতে। মাছ ছাড়াও মেলায় হরেক রকম পণ্য বিক্রি হয়। এই দিন সকাল থেকে সারাদেশের প্রায় সব এলাকার যেমন মাছ ব্যবসায়ীরা মাছ নিয়ে ছুটে আসে। এসব এলাকার মধ্যে উল্লেখযোগ্য এলাকা হলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারের মাছ ব্যবসায়ী। এ মেলায় নানা বয়সী হাজার হাজার ক্রেতার ঢল নামে মেলায় এই দিন । এদিকে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে মাছ উপরের দিকে তুলে ধরছেন বিক্রেতারা।
স্থানীয়রা জানান, শুধু এ উপজেলার লোকই নয়, আনন্দের এ মেলা উপভোগ করতে টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকেও ছুটে এসেছেন অনেকে। এবারের মেলায় প্রায় চার শতাধিক মাছ ব্যবসায়ী বাহারি প্রজাতির মাছ নিয়ে এসেছেন। মাছের মধ্যে ছিল সামুদ্রিক চিতল, বাঘাইড়, আইড়, বোয়াল, কালিবাউশ, পাবদা, গুলশা, গলদা চিংড়ি, বাইম, কাইক্কা, রূপচাঁদাসহ নানা জাতের দেশি মাছ। মাছ ছাড়াও মেলায় আসবাব, খেলনা, মিষ্টি ইত্যাদির দোকানও ছিল প্রচুর।