সিংগাইর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি:
মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। দক্ষ জনবল থাকা সত্ত্বেও তাদের উপেক্ষা করে অফিসের ইলেক্ট্রিশিয়ান ও নকশাকারকে দিয়ে উন্নয়ন প্রকল্পের তদারকি করানোর মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এর ফলে একদিকে যেমন উন্নয়নমূলক কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তেমনই স্থানীয় ঠিকাদারদের মধ্যে বিরাজ করছে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা।
একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে অনুসন্ধান চালিয়ে এসব তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেছে।
বুধবার (১৮ জুন) উপজেলার বাইমাইল থেকে বলধারা বাজার পর্যন্ত সড়কে নির্মাণাধীন একটি ২৪ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ পরিদর্শনে গেলে অনিয়মের চিত্র স্পষ্ট হয়। প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ের এই সেতুর ঢালাই কাজে তদারকির দায়িত্বে ছিলেন উপজেলা প্রশাসনের ইলেক্ট্রিশিয়ান মোয়াজ্জেম হোসেন ও এলজিইডি অফিসের নকশাকার শাহরিয়ার ইমন। সেখানে কোনো প্রকৌশলী বা ওয়ার্ক অ্যাসিস্ট্যান্টের উপস্থিতি ছিল না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, "নকশাকার হলে আপনার সমস্যা কী? যে কাজ করার উপযুক্ত, তাকে দিয়েই কাজ করাবো। উপ-সহকারী প্রকৌশলী যা বুঝিয়ে দেবে, ইলেক্ট্রিশিয়ান তাই করবে। এদের নিয়ে আপনার এত কথা কেন?"
প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম ভূঁইয়া সিংগাইরে যোগদানের পর থেকেই বিভিন্ন প্রকল্পে নিম্নমানের কাজের অভিযোগ উঠতে থাকে। এর আগে এলজিইডি অফিসের তত্ত্বাবধানের অভাবে চান্দহর সেতুর ৪৫ মিটার দীর্ঘ গার্ডার নির্মাণাধীন অবস্থায় ভেঙে পড়ে। জয়মন্টপ-দশানী সড়কের সেতুর আরসিসি পাইলিংও কাজের সময় ভেঙে যায়। এছাড়া, রামনগর-মানিকনগর সড়কে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার এবং গোলাইডাঙ্গা-বাঙ্গালা বাজার পর্যন্ত সাড়ে ৪ কিলোমিটার রাস্তার কাজে অনিয়মের অভিযোগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে প্রায় এক বছর ধরে কাজটি বন্ধ রয়েছে, যা এলাকাবাসীকে চরম দুর্ভোগে ফেলেছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, প্রকৌশলী আশরাফুল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিটি প্রকল্পে নির্দিষ্ট হারে (১%) আর্থিক সুবিধা নেন। পছন্দের কর্মকর্তাদের তদারকির দায়িত্ব দিয়ে তাদের মাধ্যমেও বাড়তি সুবিধা আদায় করেন তিনি।
স্থানীয় ঠিকাদারদের অভিযোগ, তিনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সীমিত দরপত্র পদ্ধতির (এলটিএম) পরিবর্তে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি (ওটিএম) চালু রেখেছেন। স্থানীয় ঠিকাদার মোনেম আহমেদ বিপ্লব বলেন, "ওটিএমে অভিজ্ঞতা লাগে, যা আওয়ামী লীগের পলাতক ঠিকাদারদের রয়েছে। তারা অনলাইনে টেন্ডার জমা দিয়ে প্রকৌশলী ও ইউএনও-কে আর্থিক সুবিধা দেয়, আর কর্তাব্যক্তিরা তাদের কাজ দিয়ে লাভবান হন।" আরেক ঠিকাদার রিয়াজুল ইসলাম বলেন, "সরকারি বিধি অনুযায়ী অভিজ্ঞতা ছাড়াই ২ কোটি টাকা পর্যন্ত টেন্ডার দেওয়া গেলেও ওটিএমের কারণে আমরা ২০ লাখ টাকার কাজেও অংশ নিতে পারছি না।"
অভিযোগ রয়েছে, অনিয়মের কারণে প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম ভূঁইয়াকে দুইবার বদলি করা হলেও তিনি তদবির করে তা ঠেকিয়ে দিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে স্থানীয়রা তার বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।
সিংগাইর উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম ভূঁইয়া তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, "নির্মাণ কাজে কোনো ত্রুটি পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। টেন্ডার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ এবং এটি কমিটির সিদ্ধান্তেই হয়।"
এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুল হাসান সোহাগ টেন্ডার প্রক্রিয়ায় আর্থিক সুবিধা গ্রহনের কথা অস্বীকার করে বলেন,আগের বছরগুলোর ধারাবাহিকতা দেখে কাজগুলো করা হয়েছে। পরবর্তী কাজে এলটিএম রাখবো। সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া ( পিপিআর)অনুযায়ী এটা কোনো ত্রুটি হয় নাই । অন্য কাজগুলো আমার চ্যানেলে হয় না, নির্বাহী প্রকৌশলী ও এলজিইডি অফিস দেখাশুনা করে। এছাড়া বড় বাজেটের কাজগুলো উপজেলা পর্যায়ে থাকে না।