আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনকালে একটানা ১০ বছর রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে থাকা আবদুল হামিদ মন্তব্য করেছেন, "আমাদের অনেক ত্রুটি ছিল। সেই ভুলের কারণেই আজকের এই দশা। বর্তমান পরিস্থিতি সম্ভবত আমাদের সেই ভুলগুলোরই কর্মফল।"
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) একটি শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিকের সঙ্গে কথা বলার সময় এই তথ্য জানান আবদুল হামিদের শ্যালক ডা. আনম নওশাদ খান।
তিনি আরও বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, ২০১২ সালে স্পিকারের দায়িত্বে থাকার সময়েই তিনি সতর্ক করেছিলেন, ‘সরকার স্বৈরাচারী আচরণ করলে জনগণ তা দীর্ঘকাল মেনে নেবে না।’
আবদুল হামিদ বিশ্বাস করেন, বর্তমানে কার্যত নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ যদি ভবিষ্যতে রাজনীতিতে ফিরতে চায়, তবে তাদের অতীতের ত্রুটিগুলো সংশোধন করতে হবে।
নওশাদ খান জানান, আবদুল হামিদ এখন সম্পূর্ণ পারিবারিক পরিমণ্ডলে রয়েছেন এবং রাজনীতির সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তার শারীরিক অবস্থাও এ জন্য অনুকূল নয়।
তিনি আরও নিশ্চিত করেন যে, গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুতির পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আবদুল হামিদের কোনো ধরনের যোগাযোগ হয়নি এবং কোনো পক্ষ থেকেই যোগাযোগের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
এর আগে, গত ৭ মে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে থাইল্যান্ড যাওয়ার সময় তার সঙ্গে ছিলেন নওশাদ খান। প্রায় এক মাস পর, রোববার রাতে (রাত ১টা ২৫ মিনিটে) থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে তারা একসঙ্গেই দেশে ফেরেন। ৮২ বছর বয়সী অসুস্থ ভগ্নীপতি আবদুল হামিদের সেবাযত্ন করছেন নওশাদ খান। তিনি জানান, আবদুল হামিদের ফুসফুসের ক্যানসার শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর দলটির শীর্ষ নেতাদের অনেকেই পলাতক বা কারাবন্দী। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের মতো গুরুতর অভিযোগে বিচার চলছে। বর্তমানে দলটির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ এবং নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নিবন্ধন স্থগিত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, 'ভাটির শার্দুল' হিসেবে পরিচিত আবদুল হামিদ হাওর অঞ্চল থেকে উঠে আসা একজন রাজনীতিবিদ। ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে তিনি সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ও স্পিকারের দায়িত্বও পালন করেছেন। টানা ১০ বছর ৪১ দিন রাষ্ট্রপতি হিসেবে বঙ্গভবনে কাটালেও সেই সময়কে তিনি এক ধরনের 'বন্দিজীবন' বলে আখ্যায়িত করেছেন।