ইসলামি শরীয়ত অনুযায়ী, যে কোনো কাজের বৈধতা নির্ধারণের মূলনীতি হলো, তা কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে শরীয়তের বিধিবিধান মোতাবেক ও নৈতিকতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। এর বিপরীত হলে- তা অবৈধ কাজ বলে বিবেচিত হয়। পতিতাবৃত্তি শরীয়ত ও নৈতিকতার বিপরীতমুখী এমনই একটি অপরাধ।
ইসলামের পরিভাষায় পতিতাবৃত্তিকে যিনা ও ব্যভিচার আখ্যায়িত করা হয়। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। নিশ্চয়ই এটি অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।’ (সুরা বনী ইসরাইল, আয়াত : ৩২)
আয়াতটির নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে স্পষ্ট হয় যে, যিনা ও ব্যভিচার হারাম ও মহাপাপ। সুতরাং কোনো মহাপাপের শ্রম ও তার বিনিময় কী হবে, তা বলাবাহুল্য।
হাদিস শরীফেও পতিতাবৃত্তি সম্পর্কে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে। হজরত আবু মাসউদ আনসারী (রা.) থেকে বর্ণিত যে, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুকুরের মূল্য, পতিতার উপার্জন এবং গনকের পারিতোষিক নিষিদ্ধ করেছেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২১৩৮)
এক কথায়—ইসলাম মানব মর্যাদা, নৈতিক শুদ্ধতা এবং সমাজকল্যাণ ভিত্তিক পেশার পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে এবং পতিতাবৃত্তিকে অবৈধ ও সমাজ বিধ্বংসী কার্যকলাপ হিসেবে চিহ্নিত করে। একইভাবে ইসলামের পাশাপাশি পৃথিবীর অন্য সব ধর্ম শাস্ত্রেও পতিাতবৃত্তি ও দেহব্যবসাকে বড় ধরনের পাপ বলা হয়েছে।
পতিতাবৃত্তিকে ‘শ্রম’ হিসেবে গণ্য করা এবং পতিতাদেরকে ‘যৌন*কর্মী’ বলে আখ্যায়িত করে তাদের বৃত্তিকে অর্থোপার্জনের পেশা বলে স্বীকার করে নেওয়া ধর্মের মৌলিক নীতির পাশাপাশি অর্থনীতির সাথেও সাংঘর্ষিক। ইসলামি অর্থনীতিতে কেবলমাত্র সেই সব কাজই ‘শ্রম’ হিসেবে গণ্যযোগ্য, যা মানুষের কল্যাণে সহায়ক এবং ইসলামের নৈতিক বিধানসমূহ লঙ্ঘন করে না। কিন্তু পতিতাবৃত্তি উল্লেখিত কোনো মানদণ্ডেই উত্তীর্ণ নয়। তাই পতিতাবৃত্তিকে শ্রমের একটি স্বীকৃত রূপ ঘোষণা করার প্রস্তাবটি অবশ্যই নৈতিকভাবে অত্যন্ত বিতর্কিত।
ইসলাম পতিতাবৃত্তি থেকে উদ্ধার, পুনর্বাসন ও তাদের জন্য বিকল্প পেশা এবং সম্মানজনক জীবনের সুযোগ তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করে। তাই পতিতাবৃত্তিকে বৈধতা নয়; বরং এই ব্যাধি থেকে উদ্ধার, পুনর্বাসন ও বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে তাদেরকেও অন্যদের মতো স্বাভাবিক সুন্দর জীবনে ফিরিয়ে আনতে হবে। নারীর জন্য পৃথক চাকরিক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। আর সকল প্রকার পতিতাবৃত্তি ও যৌন-ব্যবসা বন্ধ করতে হবে।
লেখক: সিনিয়র মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা, (মসজিদুল আকবার কমপ্লেক্স) মিরপুর-১ ঢাকা। চেয়ারম্যান, শারীয়াহ এ্যাডভাইজারি অ্যান্ড রিসার্চ কাউন্সিল (এসএআরসি)